ভবনা ডেস্কঃ কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুক হামলাকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বলেছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে চালায় ‘অপারেশন সিঁদুর’।
জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়। এই প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান যেসব সমরাস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই এসেছে চীনের কাছ থেকে।
শুক্রবার (৯ মে) ভারতের সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের ব্যবহৃত এসব অস্ত্রের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চীনের তৈরি এইচকিউ-৯ হলো একটি দূরপাল্লার ভূমি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা (এসএএম), যা রাশিয়ার এস-৩০০ প্রযুক্তির অনুকরণে তৈরি। এতে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত রাডার ট্র্যাকিং ও গাইডেন্স প্রযুক্তি। পাকিস্তানে এই সিস্টেম মোতায়েন রয়েছে এবং লাহোরের একটি ইউনিট ধ্বংস করার দাবি করেছে ভারত। তবে পাকিস্তান এ দাবি অস্বীকার করেছে।
ভারতের বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তান ব্যবহার করেছে জে-১০সি ফাইটার জেট, যা চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ নির্মিত। এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানটি বহু ভূমিকা পালনে সক্ষম।
এটি একসঙ্গে ছয়টি ৫০০ কেজি ওজনের লেজার-গাইডেড বোমা, সাধারণ বোমা, কিংবা ৯০ মিমি রকেট বহন করতে পারে। এছাড়া এতে রয়েছে একটি ২৩ মিমি ব্যারেলযুক্ত কামান। পাকিস্তান চীনের বাইরে একমাত্র দেশ যারা এই জেট ব্যবহার করছে।
জে-১০সি ফাইটার জেট থেকে উৎক্ষেপণের জন্য পাকিস্তান ব্যবহার করেছে চীনে তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র। এটি একটি দূরপাল্লার, দৃষ্টিসীমার বাইরে আঘাত হানতে সক্ষম আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র।
এতে রয়েছে ডুয়াল-পালসড সলিড প্রপেলান্ট রকেট এবং অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে রাডার। এর পাল্লা ২০০-৩০০ কিলোমিটার এবং এটি শব্দের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ গতিতে চলতে পারে।
চীনের তৈরি এসএইচ-১৫ হলো একটি মোবাইল হাউইটজার গান, যা ট্রাকের ওপর বসানো থাকে। এই অস্ত্র ব্যবস্থাটি ‘শুট অ্যান্ড স্কুট’ কৌশলে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে গোলাবর্ষণ করতে পারে।
এটি সাধারণ গোলাবারুদে ২০ কিমি এবং রকেট সহযোগে ৫৩ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এর গুলির হার প্রতি মিনিটে ৪-৬ রাউন্ড। এতে রয়েছে বিল্ট-ইন জিপিএস ও ইনর্শিয়াল ন্যাভিগেশন সিস্টেম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের ড্রোন ভাণ্ডারের বড় একটি অংশই চীনের উপর নির্ভরশীল।
উইং লুং ২ : এটি একটি মাঝারি উচ্চতা ও দীর্ঘ সময় উড়তে সক্ষম আক্রমণাত্মক ড্রোন। দৈর্ঘ্য ১১ মিটার, পাখার বিস্তার ২০.৫ মিটার।
সিএইচ-৪ : চীনের অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশনের তৈরি এই ড্রোনটি দেখতে অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনের মতো। এটি মাঝারি উচ্চতা ও দীর্ঘ সময় উড়তে সক্ষম ইউএভি।
পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতিতে চীনের প্রযুক্তিগত অবদান ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সবই চীনে তৈরি। এই যুদ্ধসজ্জা শুধু ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যেও নতুন মাত্রা যোগ করছে।
0 coment rios: